“ইসরায়েলের পণ্য” বলে অপপ্রচার চালিয়ে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কিছু ঘটনাপ্রবাহ চিন্তার উদ্রেক করেছে। বিশেষ করে, কিছু দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে “ইসরায়েলের পণ্য” বলে অপপ্রচার চালিয়ে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা নিন্দনীয় এবং উদ্বেগজনক। এই ধরনের কাজ শুধুমাত্র নিরপরাধ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করে না, বরং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।

ইসরায়েলের ট্যাগ লাগিয়ে দোকানপাট লুট:

প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে অনেক বাংলাদেশির আবেগ আছে, এবং এটি স্বাভাবিক। কিন্তু সেই আবেগকে ভিত্তি করে যদি কোন নির্দিষ্ট দোকানকে “ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি করছে” বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা হয়, তা একটি চরমপন্থী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে, মানুষকে উত্তেজিত করে, পরে সেই উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে — এমন ধারণাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মৌলবাদীদের উত্থান:

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান একদিনে হয়নি। এটি ছিল দীর্ঘদিন ধরে অদৃশ্যভাবে গড়ে ওঠা একটি পরিকাঠামো, যেটি মাঝে মাঝে প্রকাশ্য আকার ধারণ করে। কখনো সামাজিক মাধ্যমে, কখনো বক্তৃতা-বিবৃতিতে, আবার কখনো সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে। তারা ধর্মের ব্যাখ্যা নিজেদের মতো করে দেয়, সমাজে বিভক্তি তৈরি করে এবং সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে ভুল পথে পরিচালিত করে।

এই প্রবণতা কেন উদ্বেগজনক:

১. সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে — ভিন্নমত পোষণকারীদের টার্গেট করা হচ্ছে।

২. ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর আঘাত — গুজবের কারণে নিরীহ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৩. রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ — ধর্মের নাম ব্যবহার করে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা — ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কোনো দেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো কূটনৈতিকভাবে বিপজ্জনক।

করণীয়:

রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে গুজব ও অপপ্রচার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ধর্মীয় নেতাদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা দরকার।

শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভুল তথ্য থেকে দূরে রাখা জরুরি।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।

বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় সমাজ ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হলে গুজব, উগ্রবাদ এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে—রাষ্ট্র, সমাজ, ও নাগরিক সবারই সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।

About the author

MD AL AMIN

A self-proclaimed freethinker, MD AL AMIN has never shied away from questioning conventional wisdom and challenging the status quo. His ability to think critically and independently has made him a respected figure in various online communities, where he engages in thought-provoking discussions and encourages others to do the same.

View all posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *